সাইবার প্রতারণা

                                                                              সাইবার অপরাধ বা কম্পিউটার অপরাধ

 

সাইবার অপরাধ বা কম্পিউটার অপরাধ এমন একটি অপরাধ যা কম্পিউটার এবং কম্পিউটার নেটয়ার্কের সাথে সম্পর্কিত কম্পিউটার একটি অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে বা এটা নিজেই লক্ষ্য হতে পারে। দেবারতি হালদার ও কে জয়শংকর সাইবার অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করেছেন "আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক, যেমন ইন্টারনেট (চ্যাট রুম, ইমেল, নোটিশ বোর্ড ও গ্রুপ) এবং মোবাইল ফোন (এসএমএস / এমএমএস) ব্যবহার করে, অপরাধমূলক অভিপ্রায়ে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্মানহানি, কিংবা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, বা ক্ষতির কারণ হওয়া"। এ ধরনের অপরাধ একটি জাতির নিরাপত্তা ও আর্থিক স্বাস্থ্য হুমকি হতে পারে। আইনগত বা আইনবহির্ভূতভেবে বিশেষ তথ্যসমূহ বাধাপ্রাপ্ত বা প্রকাশিত হলে গোপনীয়তার লঙ্ঘন ঘটে। ্যাকিং, পিরাইট লঙ্ঘন, শিশু পর্নোগ্রাফির মতো অপরাধগুলো বর্তমানে উচ্চমাত্রা ধারণ করেছে। লিঙ্গের ভিত্তিতে দেবারতি হালদার ও কে জয়শংকর নারীর প্রতি সাইবার অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করেছেন, "ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, ইচ্ছাকৃতভাবে মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতির উদ্দেশ্যে নারীর প্রতি অপরাধ"। আন্তর্জাতিকভাবে, রাষ্ট্রীয় বা ও-রাষ্ট্রীয় সত্তা কর্তৃক গুপ্তচরবৃত্তি, আর্থিক প্রতারণা, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, কিংবা অন্তত একটি রাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িত এরূপ বিষয়ে হস্তক্ষেপজনিত সাইবার অপরাধকে সাইবার যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

 

বিভিন্ন ধরনের সাইবার ক্রাইম:

স্প্যামিং এবং জাঙ্ক মেইলঃ

এটি মানুষ কে ঠকানোর একটি দুর্দান্ত উপায়। এটি মূলত সম্পূর্ণভাবে সোসাল মিডিয়া ও  ইমেলের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। ফেক আইডি/ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করে তারা আপনার ঠিকানা, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড নম্বর এবং এমনকি ফোন নম্বর সংগ্রহ করে। বতমানে মাঝে মাঝে অনেকেই লটারি জিতে কয়েক লাক্ষ পাউন্ড বা বিদেশি মূদ্রা পেয়েছেন এমন ম্যাসেজ পেয়ে থাকেন। ম্যাসেজে বলা থাকে আপনার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য তাদের ইমেইল এড্রেসে পাঠিয়ে দিতে। এটি মূলত একটি স্পাম ম্যাসেজ।

পর্নোগ্রাফিঃ

পর্ন সাইট গুলো সবচেয়ে বিপজ্জনক জিনিস। বেশির ভাগ সাইট ক্ষতিকর কম্পিউটার ভাইরাস সম্বলিত। অনেক সাইট পপআপ এড সো করে এবং কখনও কখনও ইমেল এড্রেস চেয়ে থাকে। এই সাইট গুলো আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রনের প্রধান কারন হতে পারে।

হ্যাকিংঃ

হ্যাকার আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস বিস্তার করে আপনার সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করতে পারে। তাছাড়া হ্যাকার আপনার সোসাল এ্যকাউন্ট ও অন্যান্য ওয়েব সাইট হ্যাক করে ক্ষতি করতে পারে। তারা ই-কমার্স ওয়েবসাইটের ডেটাবেস চুরি করে ক্রেডিট কার্ড নম্বর হ্যাক করতে পারে। যা আপনার ব্যবসায়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ব্লাক হ্যাট হ্যাকিং একটি গুরুতর অপরাধ।

ড্রাগ ব্যবসায়ঃ

মাদক ব্যবসা চক্র ইন্টারনেটেও সক্রিয়। তারা তাদের ওয়েবসাইটে মাদকদ্রব্যের ক্রয় মূল্য, বণ্টন ব্যবস্থা ইত্যাদি তথ্য বিশ্বব্যাপী মানুষকে সরবরাহ করছে।

সাইবার ক্রাইমে নারীর নির্যাতনঃ

আমাদের দেশে অনেক মেয়েই সাইবার ক্রাইমের স্বীকার। সাইবার ক্রাইমের অজ্ঞাতার কারনে আমাদের দেশের অনেক অভিনেত্রী সহ অন্য মেয়েদের অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ছে। সামাজিক মিডিয়াতে ধর্ষণের ভিডিও এবং যৌন দৃশ্য পোস্ট করার মত বেশ কিছু অপরাধও সংঘঠিত হয়েছে। অন্যের ছবি দিয়ে ফেক অ্যাকাউন্ট খোলা, নগ্ন ছবি প্রকাশের হুমকি ইত্যাদি অপরাধের মাত্রাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রাজনৈতিক অপপ্রচার :

ইন্টারনেটে রাজনৈতিক মিথ্যাচারের তো কোনো হিসাব-নিকাশই নেই। ইন্টারনেটে ইচ্ছামতো কাহিনী বানিয়ে, ইচ্ছামতো ব্যাখ্যা দিয়ে যা খুশি তাই মন্তব্য করা হচ্ছে। ফেসবুক ও ব্লুগিং সাইটগুলোতে এসব ঘটনা ঘটছে বেশি। আমাদের দেশে বেশ কিছু ব্লুগিং সাইটে যাকে খুশি তাকে, যখন খুশি তখন, যা খুশি তাই গালি দেয়া হচ্ছে। ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য বা বিকৃত তথ্য বা প্রতারণামূলক ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে। ইউটিউব হচ্ছে তার সবচেয়ে বড় বাহন। ফেসবুকে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গ্রুপ তৈরি করে বলা হচ্ছে- অমুককে ঘৃণা করি। মানুষের ঘৃণা করার অধিকার যদিও বা থাকে তবু তারও একটি পরিশীলিত প্রকাশ থাকা উচিত।

 

পাইরেসি :

আমাদের ডিজিটাল জগৎ কেবল যে ইভটিজিং, হ্যাকিং, ডিফেমেশন, আক্রমণাত্মক মন্তব্য, পর্নোগ্রাফি ইত্যাদি দিয়ে ভরপুর তাই নয়, এটি এখন পাইরেসির বড় মাধ্যম। বাস্তবে মোবাইল ও ইন্টারনেট হয়ে উঠেছে সবচেয়ে কপি-শেয়ারের বড় মাধ্যম। এমনিতেই বাংলাদেশ পাইরেসির স্বর্গরাজ্য, তার ওপরে প্রযুক্তির সহায়তা পুরো কাজটিকে সহজ করে দিয়েছে। পশ্চিমা দুনিয়াতে ওয়ারেজ বা ফাইল শেয়ার করার যেসব সাইট আছে তাতে পাইরেটেড সফটওয়্যার, গেমস, মুভি, মিউজিক আদান-প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। আইনের ফাঁক গলিয়ে এগুলো পাইরেসি হয়ে থাকে। সেই প্রবণতা এখন বাংলাদেশি সাইটগুলোতে রয়েছে। ওখানে দেশীয় সফটওয়্যার, মিউজিক, ফিল্ম, নাটক বা টিভি অনুষ্ঠান পাইরেসি করা হয়। কোনো কোনো ওয়েবসাইটে এসব বস্তু হোস্ট করে ফেসবুক বা গুগল প্লাসে কিংবা টুইটারে এর খবর প্রকাশ করা হয়। ডাউনলোড করার ব্যবস্থাও হয়ে আছে নানাভাবে। এ ছাড়া আছে পেনড্রাইভ, মেমোরি কার্ড, সিডি-ডিভিডি ইত্যাদির মাধ্যমে পাইরেসি করা। একজনের সফটওয়্যার নকল করে বিতরণ করা হয় বিনামূল্যে। নকলের প্রতিবাদ করলে করা হয় গালিগালাজ। নকলকারী হুমকি এবং গালি দেয় আসল মেধাস্বত্বের মালিককে। কপিরাইট, ট্রেডমার্ক, ডিজাইন ও প্যাটেন্ট লঙ্ঘন প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। অনেকেই আইনের ধার ধারে না- নিজের যা খুশি তাই করে বেড়ায়। এই গোষ্ঠীটি আইনের প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলতে চায় না। এসব বিষয়ে কোনো কোনো মিডিয়া যখন প্রতিবেদন প্রকাশ করে তখনো চিলে কান নিয়ে গেছে এমন গুজব প্রকাশ করে। মোবাইলে ডাউনলোড ছাড়াও কোনো কোনো মোবাইল অপারেটর রিং টোনের নামে পাইরেসিতে লিপ্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। আমাদের দেশের প্রধান কবি নির্মলেন্দু গুণ একটি মোবাইল অপারেটরের বিরুদ্ধে পাইরেসির অভিযোগ তোলার পর সেই প্রতিষ্ঠানটির সেবাদানকারী কিছু প্রতিষ্ঠান তাকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে আপস করেছে। তবে কবি অভিযোগ করেছেন যে আরো অনেকে এখনো পাইরেসিতে লিপ্ত রয়েছে।

 

• যেকোন গণমাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে নিয়ে কোন বিভ্রান্তিকর কিংবা অপমানজনক তথ্য ছড়িয়ে।

 • কারো অগোচরে তার কোন ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি কিংবা ভিডিও বিকৃত করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ দাবি করে।

• যেকোন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারো ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে তার অজান্তে তার নামে অ্যাকাউন্ট খুলে।  

• কাউকে অশালীন কিংবা আপত্তিকর প্রস্তাব দিয়ে।

• কোন গুজব কিংবা অপপ্রচার এর যথার্থতা যাচাই না করে তা ফেসবুক কিংবা অন্য যেকোন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে।

• কারো ব্যবসায়িক ক্ষতিসাধন এর উদ্দেশ্যে তার ই-কমার্স ওয়েবসাইট এর তথ্য হ্যাক করে।

• স্প্যাম মেসেজ কিংবা মিথ্যা পরিচয় দিয়ে কারোর সরলতার সুযোগ নিয়ে তার থেকে নগদ অর্থ অথবা মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিয়ে।

• অর্থ আদান-প্রদানের বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ পুরস্কার এর প্রলোভন দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে।

 

পরিচয় চুরি

আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!

স্প্যাম ও ফিশিং

 

একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷

ব়্যানসমওয়্যার

উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷

সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং

হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷

ম্যালভার্টাইজিং

ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷

ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং

রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷

ফোন ফ্রড

অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা

প্রতিরোধে করণীয়ঃ

সাইবার অপরাধ খুব-ই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। আমাদের প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় এ ধরনের অপরাধের ভুক্তভোগীরা নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়। ফলে তাদের সামাজিক মর্যাদাহানি হয়। তবে বেশ কিছু দিকে সূক্ষ নজর রাখলে এ ধরনের অপরাধকর্মে ভুক্তভোগী হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচানো সম্ভব। এ ধরনের অপরাধ থেকে রেহাই পেতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নিজের সচেতন থাকা। অহেতুক নিজের কোন ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি কিংবা ভিডিও মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটারে রাখা উচিত নয়। ক্ষণিকের অসতর্কতায় মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটার চুরি গেলে এরূপ ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে অপরাধী হেনস্তা করতে পারে।

• যেকোন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রয়োজন ব্যতীত অপরিচিত কোন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ না রাখাই উত্তম। অনেকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য দিয়ে অন্যের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

• প্রায়শই প্রতারকচক্র গ্রাহকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে উপহারের কথা বলে অর্থ লেনদেন করতে প্রভাবিত করে। ভুলেও এ পথে পা বাড়ানো যাবে না। সব রকমের অর্থ লেনদেনের মাধ্যম ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

• যেকোন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট, ই-মেইল অ্যাকাউন্ট এর পাসওয়ার্ড ব্যবহারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

• পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার কমাতে হবে। যত্রতত্র মোবাইল কিংবা কম্পিউটার থেকে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা যাবে না। এতে তথ্যচুরির সমূহ সম্ভাবনা থাকে। • ব্যক্তিমালিকানাধীন ওয়েবসাইট এর নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন মূল্যবান তথ্য চুরি না যায়।

ভুক্তভোগীর গৃহীত পদক্ষেপ

 আপনি যদি নিতান্তই পরিস্থিতির শিকার হন,সেক্ষেত্রে বুঝেশুনে পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করা অতীব জরুরি। সর্বপ্রথম আপনাকে আইনি পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে নিতে হবে এবং অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। অতঃপর কালবিলম্ব না করে যত শীঘ্রই সম্ভব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য নিতে হবে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী থানায় জিডি করতে হবে। অনেক সময় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সদস্য এ ধরনের সাইবার অপরাধে ভুক্তভোগীর ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিরূপণ করতে পারেন না। ফলে তারা কিছুটা দায়সারা আচরণ করতে পারেন ও তাদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতির সম্ভাবনা থাকে। তাই অবশ্যই যার কাছে অভিযোগ দাখিল করবেন, তাকে এ বিষয়টি সম্বন্ধে যথাযথভাবে অবহিত করবেন যে আপনি পরিস্থিতির শিকার ও আপনার সামাজিক মর্যাদা রক্ষার্থে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করা কতটা জরুরি। জিডি করার পর হয়তো আপনাকে সাইবার ক্রাইম ইউনিটে প্রেরণ করা হতে পারে অথবা আপনাকে ডিবি পুলিশের কাছে পাঠানো হতে পারে। তাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করার পর তারা অভিযোগটি আমলে নিয়ে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অপরাধী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা আটক হওয়ার পর আদালতের অধীনে বিচারকার্য সম্পাদন হতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করা আবশ্যক। আইনজীবী ভুক্তভোগীর অভিযোগ যাচাই করে আদালতে মামলা চালান করে দিবেন। এর ফলে যথাযথ তদন্তের স্বার্থে পুলিশের থানা, সাইবার ক্রাইম ইউনিট, সিআইডি পুরো ঘটনার সুনির্দিষ্ট পর্যালোচনা করে বিচারকার্য সামনে এগিয়ে নিবেন। এর পাশাপাশি আদালতে ভুক্তভোগীর সমগ্র ঘটনাপ্রবাহের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাদান-ও অতীব গুরুত্বপূর্ণ যেন কোন গুরুত্বপূর্ণ আলামত উল্লেখ করতে ভুল না হয়। সঠিক বিচার পেতে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করার কোন বিকল্প নেই। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সাইবার অপরাধে ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়ানো। এক সমীক্ষা মোতাবেক সাধারণত ১৯-৩৫ বছর বয়সের লোকজনই সবচেয়ে বেশি সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। লোকলজ্জা,ভয়-ভীতি, সামাজিক মর্যাদাহানি ইত্যাদি নানাবিধ কারণে সাইবার অপরাধের শিকার ৭০ ভাগ ব্যক্তিই আইনের সহায়তা নেন না বলে সংশ্লিষ্টদের মত। তাই ভুক্তভোগীকে মানসিকভাবে দৃঢ় হতে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করতে হবে। বিটিআরসির এক তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৯ কোটি ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ৭০ ভাগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন। আর ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২০ ভাগ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আর মাত্র ১০ ভাগ ব্যবহারকারী নিজেদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বজায় রাখেন। এই তথ্যই প্রমাণ করে যে আমাদের মধ্যে সাইবার অপরাধ নিয়ে জ্ঞানের অভাব প্রচুর। বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিটিআরসি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সাইবার হেল্প ডেস্ক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) সাইবার অপরাধ নির্মূলে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। তাই ব্যক্তিস্বাধীনতাবিরোধী এই অপরাধ রোধে আমরা সকলে সচেতন হলে, অন্যকে সচেতন করলে ও সর্বোপরি ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে সাইবার অপরাধের মাত্রা অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে।